বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ফ্যাসিষ্ট সরকার জনগণকে ভয় পায়। তাই বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। আমাদের সমাবেশের মূল উদ্দেশ্যই হলো জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় করা।

চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের গণসমাবেশের পর আগামী ২২ অক্টোবর খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যে গণসমাবেশ সফল করতে খুলনার সকল জেলা ও মহানগরীতে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সভা সমাবেশ করে নেতা-কর্মীদের নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্ত্বরের গণসমাবেশ সফল করার জন্য আহবান করা হচ্ছে।

এদিকে বুধবার সকালে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি এবং খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন আগামী ২১ ও ২২ অক্টোবর সকল রুটে গাড়ির বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর বেলা ১২টায় বিএনপি কেডি ঘোষ রোডস্থ কার্যালয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার ও গণসমাবেশ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এ সময় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ফ্যাসিষ্ট সরকার জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে বহু আগেই। কিন্তু আগামী ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ব্যাহত করতে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছে। এটা একটা পরিষ্কার চক্রান্ত।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জনগনকে ভয় পান কেনো? সমাবেশে জনগনকে আসতে দিন, কথা বলতে দিন। বিএনপি শতভাগ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায়। জনগনের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় করাই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য।

খুলনার গণসমাবেশকে পন্ড করতে ইতোমধ্যে যশোর, বাগেরহাট, নড়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পাঁচজন শহীদ হয়েছেন। বিশ্বে এমন নজীর নেই; সেই রেকর্ড হয়েছে। জনগনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে বিএনপির পাঁচজন নেতাকর্র্মী নিহত হয়েছেন।

খুলনার গণসমাবেশের অনুমতি দেয়াকে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে জনগনের ন্যায্য দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে সহায়তা করুন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা দুদু বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংয়ের গণসমাবেশ দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকারের স্বরূপ প্রকাশ পাচ্ছে। তবে বিএনপির গণসমাবেশে পৌঁছাতে পরিবহন কখনো নেতাকর্মীদের পথে বাঁধা হতে পারে না। সমাবেশের পূর্বরাতেই সমাবেশস্থল কানায়-কানায় ভরে যাবে এবং খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্র।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খুলনার গণসমাবেশ আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামুলক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। দেশে গণতন্ত্রকে সম্পুর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। এখন গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহন করতে হবে।

নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা ও জেলার আহবায়ক আমীর এজাজ খান।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক আলহাজ্ব তরিকুল ইসলাম জহির, জেলার সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক শেখ আবু হোসেন বাবু প্রমুখ।

এদিকে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, বুধবার এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নসিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে এগুলো বন্ধ না হলে ২১ ও ২২ অক্টোবর সকল রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে। খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব জানান, এই সিদ্ধান্ত মালিক সমিতির। আমরা একাত্মতা প্রকাশ করেছি।